শিরোনাম :
চাঁপাইনবাবগঞ্জের বালু গোদাগাড়ীতে মজুত করাকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের দৌঁড়-ঝাঁপ গোদাগাড়ীতে বালু মজুদ করতে ১০ একর জমির কাঁচা ধান কর্তন রাজশাহীতে বালু মজুদ করতে ১০ একর জমির কাঁচা ধান সাবাড় বিশ্বের দীর্ঘতম গাড়িতে রয়েছে সুইমিং পুল, হেলিপ্যাডও ছুটির দিনে হেঁশেলে খুব বেশি সময় কাটাতে চান না? রবিবারে পেটপুজো হোক তেহারি দিয়েই দাম দিয়ে ছেঁড়া, রংচটা জিন্‌স কিনবেন কেন? উপায় জানা থাকলে নিজেই বানিয়ে ফেলতে পারেন উন্মুক্ত বক্ষখাঁজ, খোলামেলা পিঠ, ভূমির মতো ব্লাউজ় পরেই ভিড়ের মাঝে নজরে আসতে পারেন আপনিও স্পর্শকাতর ত্বকের জন্য বাড়িতেই স্ক্রাব তৈরি করে ফেলতে পারেন, কিন্তু কতটা চালের গুঁড়ো দেবেন? গরমে শরীর তো ঠান্ডা করবেই সঙ্গে ত্বকেরও যত্ন নেবে বেলের পানা, কী ভাবে বানাবেন? গাজ়া এবং ইরানে হামলা চালাতে ইজ়রায়েলকে ফের ৮ হাজার কোটি টাকার অস্ত্রসাহায্য আমেরিকার!
গোদাগাড়ীতে জালিয়াতি করে শিক্ষকতায় ১৮ বছর : ৩৭ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

গোদাগাড়ীতে জালিয়াতি করে শিক্ষকতায় ১৮ বছর : ৩৭ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

গোদাগাড়ীতে জালিয়াতি করে শিক্ষকতায় ১৮ বছর : ৩৭ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

ইফতেখার আলম বিশাল: গোলাম কবির আখতার জাহান। রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার কাশিমপুর একে ফজলুল হক উচ্চ বিদ্যালয়ের বর্তমানে প্রধান শিক্ষক।

মাত্র ১০ মাসের অভিজ্ঞতা নিয়ে সহকারী শিক্ষক থেকে সহকারী প্রধান শিক্ষক হয়েছিলেন তিনি। আর সর্বশেষ গত বছরের ২৫ মে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষকের পদে এসেছেন তিনি। যদিও প্রধান শিক্ষক নিয়োগে উচ্চ আদালতে রিট করেন বিদ্যালয়ের সিনিয়র সহকারী শিক্ষক আবু বকর সিদ্দিক।

রিট নিস্পতি হবার আগেই গোলাম কবির গোপনে প্রধান শিক্ষকের পদে আসীন হন বলে অভিযোগ উঠেছে। একইসঙ্গে সহকারী শিক্ষক থেকে প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগপ্রাপ্ত হওয়ার পুরো প্রক্রিয়াটিই জালিয়াতির মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়েছে বলে অভিযোগ।

দীর্ঘ প্রায় ১৮ বছর জালিয়াতির মাধ্যমে শিক্ষকতায় থাকার সুবাদে মোট ৩৭ লাখ টাকা প্রধান শিক্ষক গোলাম কবির আখতার জাহান আত্মসাত করেছেন বলে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) করা এক লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে। বিদ্যালয়ের সিনিয়র সহকারী শিক্ষক আবু বকর সিদ্দিক গত ৬ সেপ্টেম্বর দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় রাজশাহীতে এই অভিযোগ করেন।

এতে তিনি উল্লেখ করেন, গোলাম কবির আখতার জাহান শুরু থেকে এ পর্যন্ত ৩৭ লাখ টাকা আত্মসাত করেন। এরমধ্যে সরকারি বেতন প্রায় ২৬ লাখ টাকা, স্কুল তহবিল থেকে বেতন বাবদ প্রায় দুই লাখ এবং অবৈধ বিভিন্ন ভাউচারের মাধ্যমে প্রায় নয় লাখ টাকা রয়েছে।

গোলাম কবির আখতার জাহান উপজেলার কাশিমপুর এলাকার মৃত শাহজাহানের ছেলে। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি জামায়াত-শিবিরের রাজনীতিতে যুক্ত। তৎকালীন সরকার বিরোধী আন্দোলনেও অংশ নেন এই জামায়াত নেতা। এরই প্রেক্ষিতে তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা হয়। পরে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শরিফুল আলমের হাত ধরে আওয়ামী লীগে যোগ দেন প্রধান শিক্ষক। এরপরই ওই মামলা থেকে বেরিয়ে আসেন তিনি।

অভিযোগ উঠেছে, প্রায় ১৮ বছর ধরে শিক্ষকতার নানা পর্যায়ে জালিয়াতি করে প্রধান শিক্ষক পদে এসেছেন গোলাম কবির। এই দীর্ঘসময় জড়িয়েছেন নানা অনিয়মে।

জানা গেছে, ২০০১ সালের ১১ এপ্রিল সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান গোলাম কবির আখতার জাহান। এর দশ মাসের মাথায় ২০০২ সালের ১০ এপ্রিল একই বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ নেন। বিধি অনুযায়ী, সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের দুই বছর শিক্ষানবীশকাল। সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেতে সহকারী শিক্ষক হিসেবে ১২ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হয়। কিন্তু শিক্ষানবীশকাল পূরণ হবার আগেই সহকারী প্রধান শিক্ষক হয়ে যান গোলাম কবির। এর পরের ১১ বছর ছয় মাস অভিজ্ঞতা দেখিয়ে গত বছরের ২৫ মে প্রধান শিক্ষক হন তিনি। তার সবক’টি নিয়োগই বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটিকে ম্যানেজ করে হয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, সহকারী প্রধান শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষক পদে গোলাম কবিরের নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে গোপনে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ এবং গোপন স্থানে কথিত নিয়োগ পরীক্ষা হয়েছে। যাচাই-বাছাইয়ে গোলাম কবিরের আবেদন বৈধ হবার প্রমাণ নেই। তার পরও তাকেই বৈধ এবং মনোনীত প্রার্থী হিসেবে চূড়ান্ত করে নিয়োগ কমিটি।

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি শরিফুল আলম ও সদস্য আহাদ আলীর যোগসাজসে নানা অনিয়ম করে যাচ্ছেন প্রধান শিক্ষক। তার অনিয়মের প্রতিবাদ করলেই হুমকির মুখে পড়ছেন শিক্ষক-কর্মচারীরা।

জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক গোলাম কবির আখতার জাহান দাবি করেন, তার সবক’টি নিয়োগই বৈধ। তার দাবি, তৎকালীন পরিচালনা কমিটি তাকে নিয়োগ দিয়েছে। বিধি মেনেই সম্পন্ন হয়েছে নিয়োগ প্রক্রিয়া। এসময় তিনি কোন অনিয়ম ও আত্মসাতের ঘটনায় জড়িত নন বলেও দাবি করেন।

এ ব্যাপারে জানতে মোবাইলে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি শরিফুল আলমের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। ফলে তার বক্তব্য জানা যায়নি।

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নাসির উদ্দীন এরআগে সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, তার ফাইলটা আমরাও দেখেছি, সেখানে কিছু ত্রুটি লক্ষ্য করা গেছে। আমরা তার সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে অভিজ্ঞতা হিসেবে নিয়েছি। কিন্তু তৎকালীন পরিপত্র অনুযায়ী তার সহকারী প্রধান শিক্ষকের নিয়োগ অবৈধ। তারপরও তিনি বেতন পাচ্ছেন। এ ব্যাপারে যাবতীয় দায়-দায়িত্ব মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে রাজশাহী অঞ্চলের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, তৎকালীন পরিপত্র মোতাবেক ওই শিক্ষক সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের অযোগ্য। তার সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে পরের অভিজ্ঞতা আমলে নেয়ার সুযোগ নেই।

গত বছরের ২৭ অক্টোবর মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা রাজশাহী অঞ্চলের উপ-পরিচালক ড. শরমিন ফেরদৌস চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক পত্রে জানা গেছে, শরীর চর্চা শিক্ষক পদে নিয়োগে ত্রুটি থাকায় ও সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ বৈধ না হওয়ায় এবং প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগের বিষয়ে মামলা চলমান থাকায় গোলাম কবিরের প্রধান শিক্ষক পদের এমপিও’র আবেদনটি বাতিল করা হয়। এ অবস্থায় তার এমপিওভুক্তির বিষয়ে সুষ্পষ্ট নির্দেশনার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালকের কাছে প্রেরণ করেন।

তবে এ ব্যাপারে এখন পর্যন্ত সুষ্পষ্ট কোনো নির্দেশনা দেয়া ও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি বলে জানিয়েছেন অভিযোগকারী ও বিদ্যালয়টির সিনিয়র সহকারী শিক্ষক আবু বকর সিদ্দিক।

মতিহার বার্তা ডট কম: ২১ অক্টোবর ২০২০

খবরটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply